Poem

১। সাদা পোশাকের পুলিশ।

বাতাস,সাদা পোশাকের পুলিস।
যেখানেই থাকি, সে জেনে যাবেই , আর তুলে নিয়ে চলে যাবে লক আপের ভিতর।
বিজন সেই অন্ধ কুঠুরি তে , গুঁড়ি মেরে বসে আছে জলপাই পোশাক আরও আরও বাতাস।
তারা নি:শব্দে আছড়ে পড়বে আমার শরীরে,
আমি , জানিনা, জানিনা, কিছু জানিনা বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে যাবো।
হা হা করে হাসতে হাসতে হাওয়া আমাকে নামিয়ে দিয়ে যাবে গলির মুখে।
সকালে ময়লার গাড়ী আসার আগে তুমি আলুথালু দৌড়ে আসবে,
আহা কে মারল গো আমাদের
সাদা বিড়াল টাকে।

২। মনোরমাদি

মনোবেদনা কে আমি চিনি, যেমন করে চিনে গেছি মনোরমাদির হাতের খিলি পান।
সাদা, একটু কর্পূর আর বড় এলাচের গন্ধ।
হাতে নিয়েই বুঝতে পারি দমচাপা একটা কান্না আমার মধ্যে মাথা নীচু করে বসে ছিল এতদিন।
মনোরমাদির তিনটে ছাপা শাড়ি, একডজন সবুজ কাঁচের চুড়ি যা সে কখনো পরবেনা আর, একটা কাজল লতা তার জন খাটতে চলে যাওয়া ছেলের ,এ সবই চিনেছি বহু দেহ রঙ্গে।
ভাত ঘুম থেকে উঠে সে যখন পা টিপে টিপে আসে লেখার টেবিলের কাছে, আপনাকে একটা পান দিই, বলে,
আমি বুঝে যাই , অরণ্যের ভিতর কেঁদে চলেছে একা একটা ঝাপুস গাছ।

৩। পাতা পোড়া ধোঁওয়া

শীতের সকালে তুমি আয়েস করে পাতা পোড়াতে বসতে, পতিদেবতা,ধোঁওয়া ঢুকে আসত আমার কালিমাখা রসুইঘরে,
জ্বলন্ত পাতাদের চীৎকারে ফালাফালা হয়ে যেত আমার সকাল।
একদিন রোদ ঝলমল, একদিন হলুদ, একদিন বাতাসে খসে ভেসে যাওয়া।
তুমি তো জানো কিভাবে পাতার দিন ফুরোয়।
অথচ, একটা পাতাকেও লুকিয়ে থাকতে দিতেনা, গুণে গুণে তুলে এনে ফেলে দিতে আগুনে।
মালীবাবু, এই কি তোমার উচিত কাজ।
আর এই জন্য আমাদের জোড় টুটে গেল।
রাতে লেপের ওম আর সকালের পাতা পোড়া ধোঁওয়া, মেলাতে পারলাম না গো, চললাম ।
এক বার ঝরে গেলে পাতা আর গাছকে ফেরেনা, জানি, তবু।

৪। ঘুম।

ঘুম আসবে একদিন।কবিতাও।
না ঘুমিয়ে বহু রাত চোখে জ্বালা, বমি ভাব, সর্বঅঙ্গে ব্যথা। পালকের বিছানায় ঘাই মারে নগর হরিণী।কতদিন ঘুমোবেনা তুমি? চারি ধারে বন্যাজল, শত শত ঘুমন্ত হৃদয়, ডুবতে হবেই, যদি জল উঠে আসে গলি থেকে রাজপথ, পথ থেকে পালঙ্ক শিথানে। একদিন কবিতাও ঐ পথে আসে, ঘুমের ভিতর দিয়ে, বাঁকা গলি , অক্ষর ছড়ানো কংক্রীটে, লিপি তার অনির্বচনীয়।কতদিন লিখবেনা একটিও কবিতার মত কোনও কিছু? চারি ধারে উড়ন্ত অক্ষর , শত শত হাতে লেখা পাতা! কবিতা ও বুকে হেঁটে আসে একদিন। চৌকাঠ পার হয়ে ভিতর বাড়িতে!

৫।অচেনা মানুষ।

একদিন পৌঁছে যাবো অচেনা মানুষের দেশে। কোথাও যেতে হবেনা, দেশটাই ঢুকে আসবে বড় রাস্তা তারপর পাড়ার গলিতে।পড়শী আমাকে চিনতে না পেরে ভুল নামে ডাকবে, আর নাম বদলের তদন্ত করতে চলে আসবে অন্য পাড়ার পুলিস।কি খাই আমি আর কি পরি, তার তালাসে বাড়ী ঘিরে নেবে অচেনা লোকজন। খুঁটিতে বেঁধে রাখবে, পুড়তে দেবেনা পুরোপুরি।কারো মুখ, কারো নাম কেন মনে পড়ছেনা ভাবতে ভাবতে আমার বুক ভরে উঠবে পোড়া বারুদের ঘ্রাণে।বিদ্যুৎঝলকের মত তোমাকেও দেখব, একবার, একটি মাত্র বার, ভিড়ের মধ্যে,মশালের আলোয় তোমার মুখের নরম রেখা গুলি অচেনা, আর ওই নীচে বেঁকে যাওয়া ঠোঁট , ওর চুম্বন যে এখনও আমার মজ্জার ভিতর।